শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্কঃ বিশাল ব্যবধানে বড় জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। নতুন রেকর্ড গড়ার মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের চারবার ক্ষমতায় আসা হবে। অপরদিকে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হতাশাজনক ফল পেয়েছে, যা অপ্রত্যাশিত। তাই ব্যাপক অনিয়ম আর কারচুপির অভিযোগে ফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন ড. কামাল হোসেন-ফখরুল ইসলাম। ২৯৯টি আসনের মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৯৫ জয়ী প্রার্থীর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয় পেয়েছে ২৮১টি আসন। অন্যদিকে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জয় পেয়েছে ৮টি আসন। অন্যান্যরা পেয়েছে ৬টি। যে ২২ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে ফলাফলের উপর তা কোন প্রভাব ফেলবে না। দশ বছর পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে গতকাল ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণের সময় উৎসবের তুলনায় উৎকণ্ঠাই ছিল বেশি। হত্যা-সহিংসতা ও সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোট শেষ হয়েছে। নির্বাচনি সহিংসতায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেয়া, প্রার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠে। বিএনপির অনেক প্রার্থী বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছে। বিবিসির ভিডিও চিত্রেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অতিউৎসাহী সদস্যদের সহযোগিতায় এগুলো করা হয়েছে। এছাড়াও অনিয়মের অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সারা দেশে ৬৭ প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, একতরফা নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন একতরফাভাবে সরকারি দলকে বিজয়ী করতে কাজ করেছে। অনেক কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বংশালের ঢাকা ফ্রি ফোরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪০ নিনিট অপেক্ষা করেও সাংবাদিকরা প্রবেশের অনুমতি পায়নি। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অমিত হাসান জানান, প্রিসাইডিং অফিসার কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। এই ঘটনা ঘটেছে পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডের গ্র্যাজুয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই কেন্দ্র থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর দেড়টার দিকে এএসআই শফিক সাংবাদিকদের কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ নির্দেশ দিয়েছেন। ২৯৯টি সংসদীয় এলাকার ৪০ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে গোলযোগ ও অনিয়মের কারণে ২২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে। কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে কমিশনের নজরে এসেছে। দুই বছর জরুরি অবস্থা শেষে ২০০৮ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতন্ত্রে ফেরে, তাতে ২৩০ আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে সরকারে থাকা বিএনপি ওই নির্বাচনে পায় ২৯টি আসন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার প্রতিবাদে বিএনপি ও তাদের শরিকরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে একক প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায়, ২৩৪ আসন নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ৩৪ আসন নিয়ে তাদের জোট শরিক জাতীয় পার্টি বসে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে। গত দশ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাফল্য না পাওয়া বিএনপির নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চলতি বছরের শুরুতে দুর্নীতি মামলায় দ-িত হয়ে কারাগারে গেলে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটে পড়ে পূর্ণ দুই মেয়াদ ও আংশিক এক মেয়াদে সরকারে থাকা দলটি।তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশকিছু দাবির কথা বললেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি কামাল হোসেনকে সঙ্গী করে ভোটে থাকার ঘোষণা দিলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।ভোটের রাজনীতিতে ভোটের মেরুকরণে এবার দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নৌকা আর বিএনপির ধানের শীষের স্পষ্ট দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে।ভোটের আগে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা গত দশ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারো তাদের বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছিলেন ভোটারদের উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে বিএনপি ও শরিকরা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ‘গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের’ ডাক দিয়েছিল।
নির্বাচনি সহিংসতায় ২১ জন নিহত
দেশজুড়ে নির্বাচনি সহিংসতায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। এতে প্রর্থীসহ আহত হয়েছে ৭০০ জন। গত শনিবার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রতিপক্ষের হামলা, পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রাজশাহীর মোহনপুর ও গোদাগাড়ীতে আওয়ামী লীগের ২ কর্মী, নাটোরের নলডাঙায় আওয়ামী লীগ কর্মী, রাঙ্গামাটিতে যুবলীগ কর্মী, কক্সবাজারের পেকুয়ায় নৌকার সমর্থক, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও চান্দিনায় বিএনপির ২ কর্মী, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জাতীয় পার্টির কর্মী, পটিয়ায় ছাত্রসেনা ও যুবলীগ কর্মী, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে বিএনপির এক কর্মী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক যুবক, বগুড়ার কাহালুতে আওয়ামী লীগ কর্মী, নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ কর্মী, সিলেটের বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা, লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়ায় এক যুবক, গাজীপুরে আওয়ামী লীগ কর্মী, নোয়াখালীতে আনসার সদস্য, যশোরে বিএনপির কর্মী, লালমনিরহাটে এক যুবক এবং সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ভোটের আগের রাত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আমাদের প্রতিনিধিদের প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ জনগণও রয়েছেন।
সিলেট : সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমদ সোহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে তিনি মারা যান। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি ছুড়ার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বালাগঞ্জ উপজেলার আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ভোটগ্রহণের বাকি মাত্র ১০ মিনিট। এমন সময় কেন্দ্র দখল নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকরা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে কেন্দ্রের ভেতর পর্যন্ত এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিএনপির সমর্থকরা কেন্দ্রের ভেতরে থাকা একটি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত দুজন। এর মধ্যে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহেলও ছিলেন। ঘটনার পরপরই গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ৭ আসনে কেন্দ্র দখল, হামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছে। পুলিশসহ আহত হয়েছে শতাধিক। সকাল ১১টার পর থেকে এসব ঘটনা ঘটে। আসনগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া, চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকু-, চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী, চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম-৬ রাউজান এবং চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি। পটিয়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় ছাদেক (৩৫) নামে বিএনপির এক কর্মী নিহত হয়। এ ঘটনায় আরও ১০-১২ জন বিএনপির নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল ৯টায় পটিয়া পৌরসভায় দীন মোহাম্মদ (৩৯) নামে যুবলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাতারিয়া এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জাতীয় পার্টির কর্মী আহমেদ কবির (২৯)। এ সময় ৫ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন জানান, জাতীয় পার্টির কর্মী আহমেদ কবির ও তার কয়েকজন সহযোগী কাতারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথ দখল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে গুলি করে। এতে তার মৃত্যু হয়।
কুমিল্লা : কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসনে পুলিশের গুলিতে এলডিপি কর্মী মজিবুর রহমান (৩৫) নিহত হয়েছে। অপরদিকে কুমিল্লা-১০ নাঙ্গলকোট আসনে ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড শাখার সহ-সভাপতি বাচ্চু মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়াও জেলার চান্দিনা, বরুড়া, দাউদকান্দি ও নাঙ্গলকোটে ৫ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে চান্দিনা পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডে পশ্চিম বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-এলডিপির নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে মজিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত মুজিব মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্রামের সুজাত আলীর ছেলে। এ সময় ফারুক মিয়া (৩৮) ও রাহাদ (২৪) নামের ২ জন গুলিবিদ্ধসহ ৮-১০ জন আহত হয়েছে। নিহত মুজিব এলডিপির কর্মী বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব ও ওই আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. রেদোয়ান আহমেদ। চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু ফয়সাল জানান, বিএনপি ও এলডিপির নেতাকর্মীরা বেলাশ্বর কেন্দ্রে প্রবেশ করে কেন্দ্রে হামলা করে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের ওপর হামলা করে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করলে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোট উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই ইউনিয়ন বিএনপির ৭নং ওয়ার্ড শাখার সহসভাপতি বাচ্চু মিয়াকে (৫৫) ছাত্রলীগ কর্মীরা হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাকে উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এছাড়াও বরুড়া আড্ডা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ত্রিমুখী সংঘর্ষে শাহাদত, দিদার, নুরুজ্জামান ও আক্তার নামের ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অপরদিকে কুমিল্লা-১ দাউদকান্দি আসনের উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে আরও ৮-১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদানের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এতে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর নির্বাচনি এলাকার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক সহিংস ঘটনায় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়। নিহতের নাম ইসরাইল (১৯)। সে রাজঘর গ্রামের সায়েদুল ইসলামের পুত্র। পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন নিহত ইসরাইল। তার দলীয় পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া আরও ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয় এ ঘটনায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মহাজোট প্রার্থী রআম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ওই ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় তার গাড়িতে হামলা হয়। পেছনের কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়। এতে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা ও গুলি করে। এতে ইসরাইলসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাইলকে মৃত ঘোষণা করে।
চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার হাট ঘোরজানে পুলিশের ধাক্কায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত লাভলু মিয়া (৪৫) মৃত আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী সরকার জানান, রোববার সকালে লাভলু মিয়া হাট ঘোরজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে হঠাৎ বিশৃঙ্খলা হয়। তখন দায়িত্বরত পুলিশ তাকে সজোরে ধাক্কা দিলে আতঙ্ককৃত হয়ে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে মারা যায়। এদিকে চৌহালী থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
বগুড়া : নির্বাচনি সহিংসতায় বগুড়ার কাহালুতে আজিজুল হক নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছে। উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল সারকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আজিজুল নিহত হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষে বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়। দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ওই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে ধানের শীষের ভোটারদের কক্ষে প্রবেশ করতেও বাধা দিলে উভয়পক্ষের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আওয়ামী লীগ কর্মী আজিজুল নিহত হয়।
যশোর : যশোর-৪ বাঘারপাড়া অভয়নগর নির্বাচনি এলাকার অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের পাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনি এজেন্ট শামসুর রহমান মোল্যা (৭৫) মারা গেছে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য ওই কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা তাকে আটকে মারপিট করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি পৌঁছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দুপুর ১০টার দিকে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরের কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের ছোট ভাই এরশাদ হোসেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। গতকাল দুপুর পৌনে ৩টার দিকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থক উত্তেজিত যুবকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং জেলা শহরের কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর চালায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার ওসি সমীর সূত্র ধর জানান, তার মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে কারা তার ওপর হামলা করেছে এবং হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে বের করা হবে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। নিহত যুবকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভোটকেন্দ্রের পেছনের ডোবা থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নরসিংদী : নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট মিলন মিয়া (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। সে বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া গ্রামে হজরত আলীর পুত্র। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নাটোর : নাটোরের নলডাঙ্গায় ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থক ভাতিজা রতন আহমেদের ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী চাচা হোসেন আলীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার সমস খলসি দিয়ারপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত হোসেন আলী একই এলাকার অছিমুদ্দিনের ছেলে। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার সমস খলসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দেয় বিএনপি সমর্থক রতন আহমেদ ও তার স্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগ কর্মী চাচা হোসেন আলী ভাতিজা রতন আহমেদকে চড়থাপ্পড় মারে। পরে ভাতিজা রতন ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি গিয়ে ধারালো ছোরা নিয়ে এসে চাচা হোসেন আলীর পেটে আঘাত করে। এ সময় হোসেন আলীর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তবে পুলিশ ও বিএনপির দাবি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হত্যাকা-টি ঘটেছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে সহিংসতার ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মেরাজুল ইসলাম (২২) নামে এক ব্যক্তি এবং রাজশাহী-১ আসনের তানোরে মোদাচ্ছের আলী (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে মেরাজুলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুপক্ষ নিজ দলের কর্মী দাবি করছেন। এ ছাড়া রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপি প্রার্থী আবু হেনা। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, মোহনপুরে বিএনপির কর্মীরা আওয়ামী লীগের ওই কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। আহত ব্যক্তিদের দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
রাজশাহী-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন জানান, মেরাজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। কেন্দ্র দখল করতে না পেরে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা তাকে কেন্দ্রের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনও নিহত ব্যক্তিকে তাদের দলীয় কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন।
৬৭ প্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘোষণা : জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, হামলা ও আটকসহ নানা অভিযোগ সকাল থেকে বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন। এদের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীই বেশি। তবে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র বেশ কয়েকজন প্রার্থীও ভোট বর্জন করেন। ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আব্দুল হাকিম (জামায়াত নেতা), টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, টাঙ্গাইল-১ শহীদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৩ লুৎফুর রহমান খান আজাদ, টাঙ্গাইল-৬ গৌতম চক্রবর্তী, বাগেরহাট-১ মাসুদ রানা, বাগেরহাট-২ এমএ সালাম, বাগেরহাট-৩ শেখ আবদুল ওয়াদুদ (জামায়াত নেতা), বাগেরহাট-৪ আব্দুল আলীম (জামায়াত নেতা), খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (জামায়াত নেতা), খুলনা-১ আমির এজাজ খান, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, নীলফামারী-৩ অধ্যক্ষ আজিজুল ইসলাম (জামায়াত নেতা), কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (জামায়াত নেতা), সিরাজগঞ্জ-১ রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, সিরাজগঞ্জ-২ রোমানা মাহমুদ, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম (জামায়াত নেতা), ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম (জামায়াত নেতা), খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আজীজুল বারী হেলাল, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম (জামায়াত নেতা), রাজশাহী-৪ আবু হেনা, শরীয়তপুর-২ সফিকুর রহমান কিরণ, সিরাজগঞ্জ-৫ আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সিরাজগঞ্জ-৩ আব্দুল মান্নান তালুকদার, চট্টগ্রাম-৫ মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, (কল্যাণ পার্টি), ময়মনসিংহ-৩ ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন, ময়মনসিংহ-৫ জাকির হোসেন বাবলু, ময়মনসিংহ-৬ ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ-১১ ফখরুদ্দিন বাচ্চু, ময়মনসিংহ-৯ খুররম খান চৌধুরী, ময়মনসিংহ-১ আফজাল এইচ খান, ময়মনসিংহ-৮ অ্যাডভোকেট এইচএম খালেকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ-১ মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু, কিশোরগঞ্জ-২ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, কিশোরগঞ্জ-৩ ড. সাইফুল ইসলাম (জেএসডি), কিশোরগঞ্জ-৪ অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৫ শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, কিশোরগঞ্জ-৬ শরীফুল আলম, জামালপুর-৫ অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন, জামালপুর-২ সুলতান মাহমুদ বাবু, জামালপুর-৩ মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু (জামায়াত নেতা), হবিগঞ্জ-৪ আহমদ আবদুল কাদের (খেলাফত মজলিশ), নাটোর-১ কামরুন্নাহার শিরিন, নাটোর-২ সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, নাটোর-৩ দাউদার মাহমুদ, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, গাইবান্ধা-৫ ওমর ফারুক, শেরপুর-২ ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরী, শেরপুর-৩ মাহমুদুল হক রুবেল, যশোর-১ মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি, যশোর-৪ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (এনপিপি), বগুড়া-২ মাহমুদুর রহমান মান্না (নাগরিক ঐক্য), ঝিনাইদহ-১ অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান ও ঝিনাইদহ-৩ মাওলানা মতিয়ার রহমান (জামায়াত নেতা)।
লাঙ্গল প্রতীকের ভোট বর্জনকারীরা : টাঙ্গাইল-৮ কাজী আশরাফ সিদ্দিকী, খুলনা-১ সুনীল শুভ রায়, বাগেরহাট-৪ সোমনাথ দে, গাইবান্ধা-৪ মশিউর রহমান, গাইবান্ধা-৫ গোলাম শহীদ। এছাড়া ঢাকা-১ আসনে বিএনপির সমর্থন পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, যশোর-৫ কামরুল ইসলাম বারী, চট্টগ্রাম-১৬ জহিরুল ইসলাম (জামায়াত নেতা), বগুড়া-৩ আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, বগুড়া-৪ আফজাল হোসেন নয়ন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট বর্জন করেছেন।
ধানের শীষের এজেন্ট না এলে কী করার আছে : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ধানের শীষের এজেন্টরা কেন্দ্রে না আসলে কী করার আছে? তারা কেন্দ্রে কেন আসেননি বা কেন কোনো এজেন্ট নেই, সেটা প্রার্থীর নির্ধারিত এজেন্টরাই বলতে পারবেন। গতকাল রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে এলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি। বেলা পৌনে ১১টার দিকে কেন্দ্রটিতে ভোট দিতে আসেন কেএম নূরুল হুদা। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, কেন্দ্রে কেন ধানের শীষের কোনো এজেন্ট নেই? জবাব দিতে গিয়ে সিইসি আরও বলেন, তারা (ধানের শীষের এজেন্ট) কেন আসতে পারেননি, তা তিনি জানেন না। তবে পোলিং এজেন্টদের কেউ আসতে পারছেন না, বা তাদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছেÑ এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে করেননি। আইইএস স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট আছে কি না, এ বিষয়টি তিনি (সিইসি) খেয়াল করেননি। এ নিয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসা করা হয়নি বলে জানান তিনি। সারা দেশে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কেএম নূরুল হুদা বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইইএস স্কুল কেন্দ্রের নির্বাচনি পরিবেশও ভালো বলে তিনি জানান। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনারকে অবগত করে, এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, কেন্দ্রগুলোতে নিয়োজিত পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া আছে। সারা দেশের সব কেন্দ্র ঢাকায় বসে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না জানিয়ে সিইসি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকবে। বিশৃঙ্খলা হওয়া কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
ভোট শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে : নির্বাচন নিয়ে কমিশন সচিবালয়ে কথা বলেন হেলালুদ্দীন আহমদ। সারাদেশে শান্তিপূর্ণ ও ব্যাপক অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের ফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে কয়েকটি আসনের আংশিক ফল ঘোষণার সময় তিনি এ দাবি করেন। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মানুষের প্রত্যাশিত বড় ভোট উৎস সম্পন্ন হয়েছে। ২৯৯টি সংসদীয় এলাকার ৪০ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে গোলযোগ ও অনিয়মের কারণে ২২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে। কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে কমিশনের নজরে এসেছে। কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রত্যেকটি সহিংসতার ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাচনের পর প্রিসাইডিং অফিসারসহ সব নির্বাচন কর্মকর্তা যাতে ফল ও নির্বাচন সামগ্রী নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফিরে আসতে পারেন তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।